ইমাম খাইর, সিবিএন:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার জেলার চারটি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের জমা দেয়া মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই চলছে।

রবিবার সকাল ১০ টায় কক্সবাজার হিল ডাউন সার্কিট হাউজ-এর সম্মেলন কক্ষে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাছাই কাজ শেষ হলে যোগ্য প্রার্থী তালিকা জানা যাবে।

মনোনয়নপত্র বাছাই অনুষ্ঠানে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মাসুদুর রহমান মোল্লা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল অাফসার, জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ বশির আহমদসহ সকল সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও  সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত আছেন।

তবে বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কেউ প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে চাইলে আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। এ পর্বের পর ১০ ডিসেম্বর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রতীক বরাদ্দের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন।

গত ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। পরদিন থেকে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হয়। ২৮ নভেম্বর মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ছিল। সব ঠিকঠাক থাকলে ভোটগ্রহণ হবে ৩০ ডিসেম্বর।
সংসদীয় আসনের ক্রমানুযায়ী মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে বলে জানান কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ বশির আহমদ।
কক্সবাজার জেলার ৪টি পৌরসভা ও ৭১ ইউনিয়নের ৫১২ ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ২০৪ জন। সেখানে ৭ লাখ ৭ হাজার ৮৩১ জন পুরুষ এবং ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৩ জন মহিলা। ভোট কক্ষের সংখ্যা ২ হাজার ৭৩৮টি।
জেলার চারটি সংসদীয় আসনে মোট ৩৪ টি মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়। দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে ইতিমধ্যে বাছাই করা হয়ে গেছে বলে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে।
রোববার আনুষ্ঠানিক বাছাই-এ বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্রগুলো কেন বাতিল করা হয়েছে শুধুমাত্র সে তথ্যটা জানানো হবে।
জেলার ৪ আসনেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। শুধুমাত্র মহেশখালী-কুতুবদিয়া একটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। ববি হাজ্জারের দল জাতীয়তাবাদি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম কক্সবাজার-৩ বাদে তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাসহ মোট ৩৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।
মনোনয়ন দাখিলকারীদের মধ্যে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) ৮ জন, কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) ১২ জন, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) ৬ জন এবং কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে ৮জন।
এদের মধ্যে উখিয়া-টেকনাফের বহুল বিতর্কিত সাংসদ আব্দুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন চৌধুরীসহ তিনজন নারীও রয়েছেন। তবে ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত কারা থাকবেন তা নির্ধারণ হবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) :
এডভোকেট হাসিনা আহমেদ (বিএনপি), জাফর আলম (আওয়ামী লীগ), আলী আজগর (ইসলামী শাসনতন্ত্র), মুহাম্মদ ফয়সাল (এনডিএম), আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টি), বদিউল আলম (স্বতন্ত্র), তানিয়া আফরিন (স্বতন্ত্র) মৌলভী মো: ইলিয়াছ (জাতীয়পার্টি)।
চকরিয়া উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন এবং পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-১ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৮১ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১৩৯টি।
চকরিয়া উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়নের ৯৯টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে এক লাখ ৪৮ হাজার ৮০৫ জন পুরুষ ও এক লাখ ৩৫ হাজার ৬০৬ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪১১ জন।
পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৪০ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৫৫ হাজার ৬২০ জন পুরুষ ও ৫০ হাজার ৬৫০ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৬ হাজার ২৭০ জন।
কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) :
আশেক উল্লাহ রফিক (আওয়ামী লীগ), এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ (জামায়াত), জসীম উদ্দিন (ইসলামী শাসনতন্ত্র), আবু ইউসুফ মো: মনজুর আহমদ (ইসলামি ঐক্যফ্রন্ট), আলমগীর মো: মাহফুজ উল্লাহ (বিএনপি), শাহেদ সরওয়ার (বিকল্পধারা বাংলাদেশ), মোহাম্মদ মোহিব্বুল্লাহ (জাতীয় পার্টি), মো: শহিদুল্লাহ (এনডিএম), আনসারুল করিম, আবু বক্কর ছিদ্দিক, মো: জিয়াউর রহমান, এ এম মাসুদুল ইসলাম মাসুদ।
কুতুবদিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং মহেশখালী উপজেলার একটি পৌরসভার ৮টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-২ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮১ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১০৫টি।
কুতুবদিয়া উপজেলায় ৬ ইউনিয়নের ৩৭টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৪৪ হাজার ২৩ জন পুরুষ ও ৪০হাজার ৪৪২ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪৬৫ জন।
মহেশখালী উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে ৬৮ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৯ জন পুরুষ ও ১ লাখ ১ হাজার ৬৬৭ নারীসহ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১১ হাজার ৬১৬ জন।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) :
সাইমুম সরওয়ার কমল (আওয়ামী লীগ), লুৎফর রহমান কাজল (বিএনপি), মোহাম্মদ আমিন (ইসলামি শাসনতন্ত্র), মুফিজুর রহমান (জাতীয়পার্টি), মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম ও মো: হাছন।
কক্সবাজার সদর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন এবং রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-৩ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৩৬ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১৬৮টি।
সদর উপজেলায় ১০৮টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে এক লাখ ৩৫ হাজার ১৪ জন পুরুষ ও এক লাখ ২১ হাজার ৪ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার ১৮ জন।
রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৬১ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৮১ হাজার ৪১০ জন পুরুষ ও ৭৬ হাজার ৬০৮ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৫৮ হাজার ১৮ জন।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) :
শাহজাহান চৌধুরী (বিএনপি), শাহীন আক্তার (আওয়ামী লীগ), সাইফুদ্দিন খালেদ (এনডিএম), আবল মনজুর, মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, মোহাম্মদ শোয়াইব ও এম. গফুর উদ্দিন।
উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন এবং টেকনাফ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-৪ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০৬ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১০০টি।
উখিয়া উপজেলায় ৪৫টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৬০ হাজার ৪৮৮জন পুরুষ ও ৫৮ হাজার ২৯৭ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৫ জন।
টেকনাফ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নে ৫৫ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৭২ হাজার ৫২২জন পুরুষ ও ৭৩ হাজার ৯৯ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৪৫ হাজার ৬২১ জন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার ক্ষমতা:
রিটার্নিং কর্মকর্তারা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। মনোনয়নপত্র বাছাইপর্বটি যাতে বিতর্কমুক্ত ও আইনসংগত হয়, সেটা নিশ্চিত করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের আইনে বিরাট ভূমিকা নিশ্চিত করেছে।
কোনো কারণে হলফনামায় আটটি তথ্যের ভুল তথ্য প্রদানের জন্য তাঁরাই মনোনয়নপত্র বাতিল করতে পারেন।
কারণ আইন বলেছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর স্বীয় উদ্যোগে বা কারও আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে সংক্ষিপ্ত তদন্ত পরিচালনা করে মনোনয়নপত্র বাতিল করতে পারবেন।
শুধু তা-ই নয়, হলফনামায় প্রদত্ত কোনো তথ্য মিথ্যা বা ভুল বলে প্রমাণিত হলে তার প্রতিকারে মামলা দায়ের করতে পারবেন।
দণ্ডবিধির ১৮১ ধারা অনুযায়ী মনোনয়নপত্র যাচাইয়ে অসত্য তথ্য দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ জন্য অনধিক তিন বছরের জেল ও জরিমানার বিধান আছে।